সম্পাদকীয়--
অজানার মাঝে রহস্যময়তা লুকিয়ে থাকে। জন্ম-মৃত্যু বুঝি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্য। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আমরা অভ্যস্ত, অভ্যাসগুলি আমাদেরকে নিয়ম চারিতার মাঝে বেঁধে রাখে। এর বাইরেও যে একটা জগত আছে তার সামান্য ধারণা আমরা মনের মাঝে পুষে রাখি। এছাড়া থাকে আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস। যা চোখে দেখতে পাই না তার অস্তিত্ব নেই, এমনটাও তো হতে পারে না। কোনদিন গ্রীনল্যান্ড না দেখলেও জায়গাটা যে আছে এ বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি। ভূত বা অলৌকিকতার ওপর স্পষ্ট ধারণা সবার নেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তির ধারণাকে নিয়ে আমরা প্রামাণ্য কিছু খুঁজে পাই না বটে তবু তা নেই. বলে কখনোই উড়িয়ে দিতে পারি না।
ভগবান বা দেবদেবীদের সাক্ষাৎ দর্শন না পেয়েও আমাদের মধ্যে আস্থা থেকে যায়। ঠিক তেমনি অশরীরী আত্মা আছে সে আত্মা অজর অমর এ হেন হাজারো ব্যাখ্যা আমরা আনদেখা করতে পারি কি? আমাদের এই পৃথিবী কত না রহস্যময়--দুরন্ত ঘূর্ণির মত পৃথিবী ঘুরছে কিন্তু আমাদের শারীরিক স্থিরতা একদম স্বাভাবিক। তবে এই স্থিরতা সময় সাপেক্ষ, সময় আমাদের ক্রমশ জীবনের শেষ প্রান্তে ঠেলে নিয়ে যায়--যার পরিণতি হল মৃত্যু। মৃত্যুভয় থেকে বড় ভয় বুঝি আর কিছু নেই। মৃত্যু রহস্য সব চেয়ে বড় রহস্য--একে উজাগর করা যায় নি। মৃত্যু সত্য কিন্তু তারপর তার কোনো অস্তিত্বই কি আর অবশেষ থাকে না?
আত্মার অমরতা আমরা মেনে নিয়েছি, জন্ম-জন্মান্তরের বিশ্বাসও আমাদের মনের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আত্মার অস্তিত্ব যখন আমরা মেনে নিতে পারি তখন তার নামান্তর ভুত-প্রেত শব্দগুলি শুধুমাত্র কাল্পনিক হবে কেন ? ভূত-পেত্নী ইত্যাদি শব্দগুলির সৃষ্টির মধ্যে কিছুটা উদ্ভট মানসিকতা থাকলেও আমরা সত্যকে লংঘন করতে পারে না।
ভগবানকে বিশ্বাস করতে পারলে ভুতের অস্তিত্বকে আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। ভগবানকে সেই জানে যে কিনা মনন সৃজনে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন আর ভূতকে সে জানে যে কিনা তেমনি এক পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন।
ভূতের সঙ্গে ভগবানের তুলনা হয় না জানি কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে অস্তিত্ব খুঁজে ফিরতে ফিরতে আমরা নিজেকে হারিয়ে ফেলি। হেড-এর বিপরীত দিক যেমন টেল হয় তেমনি ভগবানের অপর প্রান্ত আত্মা-প্রেতাত্মা মানে ভূত-পেত্নী--এ কথা ধরে নিতেই পারি।
বাস্তবতার পাঁয়তারা কষলেও মনে মনে আমরা অলৌকিকতা দেখতে, শুনতে ভালবাসি। চমৎকারী দৃশ্যগুলি বুঝি আমাদের মনেও সৃজিত হয়, স্বপ্ন স্মৃতি নিয়ে রাতের জানা-অজানা টানাপোড়েনে আমরাও দোদুল্যমান হই। আমরা পক্ষীরাজে ঘুরে বেড়াই, কল্পবৃক্ষ ঝাঁকিয়ে কুড়িয়ে নেই বঞ্চিত মনের ইচ্ছেগুলি।
যাই হোক, ভূত পেত্নীর অপশব্দের প্যাঁচে না পড়ে, বিশ্বাস অবিশ্বাসের বাকবিতণ্ডায় না গিয়ে আসুন না আমরা তাদের রহস্য অলৌকিতার মাঝে খানিকটা ডুবে যাই।
আজ এ পর্যন্ত। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন, করোনা ভূত থেকে সর্বদা বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা করবেন। জানবেন এ ভূত ঘাড়ে নিয়ে আমাদের সারাটা জীবন বেঁচে থাকতে হবে। নিবেদনইতি--তাপসকিরণ রায়, সম্পাদক, বর্ণালোক, দ্বিমাসিক অণুগল্পের ব্লগ ও ই-পত্রিকা।
সহঃ সম্পাদকের কলমে:
সময় চলিয়া যায় নদীর ও স্রোতে। তেমন ভাবে আমরাও এগিয়ে চলছি আমাদের সমস্ত ধারনা কে সঙ্গে করে। দেখতে দেখতে আবার একটা শরৎ কাল চলে এলো। আসতে আসতে শুরু হয়ে গেছে দেবীকে বরণ করে নেওয়ার সময়। আমরাও আমাদের পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি নতুন ধারায়। আরো ভালো কি ভাবে করা যায় চলছে তারই প্রস্তুতি একেরপর এক সংখ্যায়। বছর ঘুরে যেমন দেবী আসছেন তেমন ভাবে আপনারাও থাকুন আমাদের পাশে। লেখক লেখিকা থেকে শুরু করে পাঠক পাঠিকা পর্যন্ত। পাঠকরাই আমাদের সম্পদ। পত্রিকাটি আপনারা যত ভালোবাসবেন আমরা তত এগিয়ে যাবো।
--শমিত কর্মকার সহ-সম্পাদক, বর্ণালোক, দ্বিমাসিক অণুগল্পের ব্লগ ও ই-পত্রিকা
সহ-সম্পাদিকার কলমে--
এবারের অণুগল্পের বিষয় হলো ভূত-ভৌতিক-অলৌকিক।
অজানা-অদেখা অতীন্দ্রিয় জগতের গল্প। ভূত আছে কী নেই, এ নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন ভূত বা ভৌতিক জগত সম্বন্ধে মানুষের কৌতূহলও কিছু কম নয়! আবার লৌকিক বিশ্বাসের বাইরেও যে কিছু শক্তি ক্রিয়া করে অর্থাৎ অলৌকিক ঘটনাবলী সে সম্পর্কেও মানুষের আগ্রহের সীমা পরিসীমা নেই।
তবে ভূতের অস্তিত্বটুকুও যে ক্রমশ বিপন্ন হয়ে আসছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। না আছে আশ শ্যাওড়ার ঘন জঙ্গল না কোন পোড়ো বাড়ী। শ্যাওড়া গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা পেত্নীরাও একপ্রকার বাধ্য হয়েই এখন ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। প্রমোটারের কল্যাণে এ সমস্ত আজ অবলুপ্তির পথে। যদিও বাঁশবাগানের বাঁশঝাড় গুলি এখনো সম্পূর্ণ রূপে তেনাদের হাতছাড়া হয়নি। ভূত নিয়ে তর্ক বিতর্ক যারা করে করুক, ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে যাদের সন্দেহ থাকে থাক, ভূতের গল্পের অস্তিত্ব বজায় রাখতেই হবে। দেশে বিদেশে সাহিত্য জগতের অনেকটা জুড়েই রয়েছে ভৌতিক জগতের বিশাল সাম্রাজ্য।
শুধু মাত্র শিশু কিশোর সাহিত্য বলে নয়, বড়দের অনেক পত্রিকাই ভূত বিষয়ক সংখ্যাও প্রকাশ করে থাকে।
এবারের অণুগল্প গুলির মধ্যে ভূতেরাই না হয় বিচরণ করুক স্বচ্ছন্দে।
---সহ-সম্পাদিকা, বর্ণালোক, দ্বিমাসিক অণুগল্পের ব্লগ ও ই-পত্রিকা।